নাটোরের বড়াইগ্রামে কৃত্রিম সংকট তৈরী করে সরকার প্রদত্ত রাসায়নিক সার অধিক মূল্যে বিক্রয় করছেন ডিলার, সাবডিলার ও নন কার্ডধারী সার ব্যবসায়ীরা। ফলে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছে কৃষকরা। এতে চলতি মৌসুমে ধান চাষে চরম বিপাকে পড়েছে কৃষকরা।
জানা যায়, ‘সরকার প্রদত্ত সারের নির্ধারিত মূল্য প্রতি বস্তা (৫০) কেজি ইউরিয়া ও টিএসপি ১১শ টাকা করে, ডিএপি ৮শ টাকা ও এমওপি ৭৫০ টাকা।
’ তবে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সার ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক দামে বিক্রয় করছে। উচ্চ দামে সার কিনতে ভোগান্তিতে পড়ছে কৃষকরা। কৃষকের এমন দুর্দশায় মনিটরিংয়ের কোন ব্যবস্থা নেই। অধিকাংশ ডিলার, সাব-ডিলারের স্টক ও রেজিস্টার খাতায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তার মন্তব্য বা স্বাক্ষর নেই।
ভুক্তভোগী কয়েকজন কৃষক বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা প্রতি বস্তা ইউরিয়া ১৩শ থেকে ১৪শ টাকায়, টিএসপি ১৭শ থেকে ১৮শ টাকায়, ডিএপি ১৭শ থেকে ১৮শ টাকায় ও এমওপি ১৩শ থেকে ১৪শ টাকায় বিক্রয় করছে। আমরাও অনুরুপ দামে ক্রয় করেছি। ’
তিরাইল এলাকার কৃষক ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আমি কয়েক বিঘা জমিতে ধান রোপন করেছি। কোন ডিলার বা সাবডিলারের ঘরে সার পাইনি। তবে খুচরা বিক্রেতার দোকানে সরকারী রেটের চেয়ে প্রায় দেড় গুণ দামে সার কিনেছি। এতে কৃষক মরে শেষ হয়ে যাবে। ’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নন কার্ডধারী কয়েক জন সার ব্যবসায়ী জানান, ডিলার ও সাব-ডিলারের কাছ থেকে রশিদ বিহীন সরকারী রেটের অধিক মূল্যে সার ক্রয় করে আনতে হয়। আমরা তা বস্তা প্রতি কিছু লাভে কৃষকের কাছে বিক্রয় করি। তাদের নাম প্রকাশ করলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। পরবর্তীতে আমাদের আর সার দিবে না তারা।
উপজেলা সাব-ডিলার সভাপতি আকরাম হোসেন জানান, উপজেলায় ৭ ইউনিয়নে ৭ জন এবং ২ পৌরসভায় ৪ জন, মোট ১১ জন বিসিআইসির মূল ডিলার রয়েছেন। প্রতি ইউনিয়নের বিসিআইসির মূল ডিলারের প্রাপ্ত সারের ৫০ শতাংশ সার ৯ ভাগে ভাগ করে তার ১ ভাগ ১ জন সাবডিলার পেয়ে থাকি। যেটা পরিমানে খুবই কম। কোন ইউনিয়নে ৯ জনের স্থলে ৬ থেকে ৮ জন সাব ডিলার থাকা সত্বেও ৯ ভাগের ১ ভাগ সার পেয়ে থাকি। যা আমরা সরকারী বিধি অনুসারে বিক্রি করে থাকি। অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ সার বিসিআইসির মূল ডিলার নিজ দোকান হতে কৃষকের নাম ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর সহ মেমো ও রেজিস্টারের মাধ্যমে বিক্রয়ের নিয়ম থাকলেও তা অনুসরণ করে না। পরবর্তীতে মূল ডিলাররা বাকি সার নন কার্ডধারীদের কাছে গোপনে বিনা রশিদে বেশী দামে বিক্রয় করে। এজন্যই কৃষক বাজারে নন কার্ডধারীদের কাছ থেকে বেশী দামে সার ক্রয় করে। জোয়াড়ী ইউনিয়নের বিসিআইসির মূল ডিলার উর্মি টেডার্সের মালিক অজয় কুমার জানান, আমার অধীনে ৫ জন সাবডিলার আছে। তারমধ্যে ৩ জনের নির্দিষ্ট জায়গায় আছে, অপর ২ জন নাই। একজনের থাকার কথা কুমরুলে অপর জনের কায়েমকোলা। কিন্তু তারা ২ জনেই আহমেদপুর বাজারে ব্যবসা করছে। সরকারী বিধি মোতাবেক রেজিস্টার খাতায় স্বাক্ষর করে সার নেওয়ার নিয়ম থাকলেও তারা স্বাক্ষর করে না। ভ্যান চালকের মাধ্যমে চিরকুট ও টাকা পাঠিয়ে সার নেয়। বাজারে যেহেতু থাকি পরিচিত কিছু নন কার্ডধারী সার ব্যবসায়ী সার নিতে আসলে না দিয়ে পারি না তাই ২থেকে ৪ বস্তা দিয়ে থাকি। এটা কৃষি অফিসারেরাও জানেন।
বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী জানান,কৃষি অফিসার ও ডিলার মিলে একটা সিন্ডিকেট তৈরিই করেছে বড়াইগ্রামে। যার ফলে সারের কৃত্তিম সংকট তৈরি হয়েছে। বার বার উপজেলা মাসিক মিটিং-এ উনাকে সিন্ডিকেটের বিষয়ে সতর্ক করলেও তিনি কোন অদৃশ্য কারণে উনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।
এ ব্যাপারে বড়াইগ্রামের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা জানান, সারের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য পৌর ও ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে উপসহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা সর্বক্ষণ বাজার মনিটরিং করছে। যদি কেউ মজুদ ও বেশী দামে বিক্রি করে তাহলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হবে।